নিউজ ডেস্ক , ১৫ আগস্ট : আজ দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। আজকের দিনেই ভারতবাসী পেয়েছিল ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির স্বাদ। লালকেল্লায় ওড়েছিল ভারতের তেরঙ্গা পতাকা। হাজার হাজার বীর সেনানীদের আত্মবলিদান ও রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা। আজ স্বাধীনতার দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সহ দেশাত্ববোধক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হল। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশরা ভারতে রাজত্ব করেছে। এই সময়কালে ভারত থেকে বহু দুর্মূল্য সোনাদানা সহ নানা দুষ্প্রাপ্য জিনিস লুট করে নিয়ে গেছে ইংরেজরা। কী কী জিনিস খোয়াতে হয়েছে আমাদের? আজ আপনাদের জানাব ভারত থেকে ব্রিটিশরা কী কী জিনিস চুরি করেছে….
১/ কোহিনুর হিরে। দুর্মূল্য এই হিরো চুরির ঘটনা কে না জানে! ১০৫.৬ মেট্রিক ক্যারাটের হিরে। ওজন ২১.৬ গ্রাম। অন্ধ্রপ্রদেশের কল্লুর খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল এই হিরে। মুঘল সম্রাটের মুকুটের শোভা বাড়াত এই হিরে। ১৮৪৯ সালে ভারতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে ঘাঁটি গড়লে রানি ভিক্টোরিয়াকে এই হিরেটি নাকি উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন সম্রাট নিজেই। পরবর্তীকালে এই হিরে দেশে আনার তোড়জোড় চললেও কোনো লাভ হয় নি। জানা গিয়েছে লন্ডনের জুয়েল হাউসে শোভা পায় বিশ্ব বিখ্যাত হিরো।
২/ টিপু সুলতানের আংটি: টিপু সুলতান তখন মহীশূরের অধিপতি। মহীশূরের বাঘের সঙ্গেও তুলনা করা হত তাঁকে। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। তার পর টিপুর তরোয়াল এবং আংটি ছিনিয়ে নেয় ব্রিটিশরা। পরে তরোয়াল ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু আংটি ফেরায়নি। ২০১৪ সালে সেই আংটি নিলাম করে দেয় ব্রিটিশরা। তাতে দাম উঠেছিল সাড়ে এক লক্ষ ৪৫ হাজার পাউন্ড। আংটির উপরে দেবনগরী ভাষায় ‘রাম’ লেখা ছিল।
৩/ শাহজাহানের সুরাপাত্র: দুধ সাদা এই পাত্রেই নাকি সুরাপান করতেন শাহজাহান। ১৯ শতকে ব্রিটিশ সেনাপ্রধান চার্লস সেটন গুথরি এটি চুরি করে নিয়েছিলেন। তার পর থেকে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এবং অ্যালবার্ট জাদুঘরে ভাগাভাগি করে রাখা রয়েছে এটি।
৪/ রসেটা স্টোন: কালো রঙের এই ব্যাসাল্ট শিলার উচ্চতা ১১৪ সেন্টিমিটার এবং চওড়া ৭২ সেন্টিমিটার। ১৯৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মিশরের ফারাওদের সম্পত্তি ছিল এই শিলা। এর উপর তিন মিশরীয় হরফে অনেক কিছু লেখা রয়েছে।
৫/ মিশরীয়দের কাছ থেকে প্রথমে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তার পর ১৮০০ সালে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হলে এটি তাদের দখলে চলে আসে। এটি আজও লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরের শোভা বাড়াচ্ছে।
৬/ হেভিয়া ব্রাসিলিয়েনসিসের বীজ: রাবার গাছের বীজ। ব্রাজিল থেকে অন্তত ৭০ হাজার রাবার গাছের বীজ চুরি করে নিয়েছিলেন হেনরি উইকহ্যাম। হেনরি ছিলেন একজন ব্রিটিশ পর্যটক।
৭/ ১৮৭৫ সালে তিনি এগুলি চুরি করে দেশে ফিরে আসেন। লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনে এই বীজগুলি রাখা রয়েছে। শোনা যায় এর ফলে সে সময় ব্রাজিলের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল।
৮/ বেনিন ব্রোঞ্জ: ব্রোঞ্জের পাতের উপর খোদাই করা হরফের জন্য বিখ্যাত ছিল বেনিন সাম্রাজ্য। ১৯৮৭ সালে বেনিনে আধিপত্য বিস্তারের পর ব্রিটিশরা দু’শোরও বেশি এই খোদাই করা ব্রোঞ্জ চুরি করে নেয়। সেগুলিও ব্রিটিশ জাদুঘরে রাখা রয়েছে।
৯/ ইথিয়োপিয়ার পাণ্ডুলিপি: ১৮৬৯ সালে ইথিয়োপিয়ান সম্রাটকে যুদ্ধে পরাজিত করার পর অন্তত ১২টি ধর্মীয় পাণ্ডুলিপি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ব্রিটিশ গ্রন্থশালায় সেগুলি রাখা রয়েছে।
১০/ পরবর্তীকালে এই পাণ্ডুলিপি ফিরে পাওয়ার জন্য ‘ইথিয়োপিয়ান ট্রেজার’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তাদের দাবি মেনে নেয়নি ব্রিটিশরা।
১১/ এলগিন মার্বেল: প্রাচীন গ্রিক মন্দির ছিল পার্থেনন। ১৮০৩ সালে লর্ড এলগিন এই মন্দিরের মার্বেল নিয়ে চলে এসেছিলেন। এলগিনের দাবি ছিল, অনুমতি নিয়েই তিনি মার্বেল এনেছিলেন। কিন্তু এই দাবির কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। যদিও গ্রিকদের দাবি মেনে সেগুলি ফিরিয়েও দেননি। ব্রিটিশ জাদুঘরে এটিও রাখা রয়েছে।
১২/ অমরাবতী ভাস্কর্য: এটিও লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে রাখা রয়েছে। ১৪০ বছর আগে তত্কালীন মাদ্রাজ থেকে এই ভাস্কর্য নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশরা।