নিজস্ব সংবাদদাতা , মানিকচক , ১৪ নভেম্বর : আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল ৫১ ফুটের কালী প্রতিমার পুজোর। বিশাল আকারের প্রতিমা তৈরি করে আকর্ষণ বজায় রেখেছে মালদার মানিকচক বিধানসভার শোভানগর উল্কা ক্লাবের পুজো কমিটি। গতবার ছিল ৫১ ফুট। এবছর করোনা আবহের মধ্যে অনেক কর্মসূচি কাটছাঁট করে কম বাজেটে এবার তাদের পুজো হচ্ছে। হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মেলবন্ধন এখানকার পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
একচল্লিশ বছর ধরে শক্তির দেবীর আরাধনায় সম্প্রীতির নজির গড়ে চলেছে শোভানগরের উল্কা ক্লাবের এই কালী পুজো। এই পুজো উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং জাগ্রত বলে জনশ্রুতিও আছে। শুক্রবার রাতে ৫১ ফুট উঁচু মূর্তির উন্মোচন করে করে পুজোর সূচনা করেন মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মন্ডল। সভাধিপতি ছাড়াও এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, মানিকচক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ হেম নারায়ন ঝা সহ অন্যান্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এলাকার গরীব দুস্থ মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হয় উল্কা ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফে। উল্লেখ্য, মালদা মানিকচক রাজ্য সড়কে শোভানগর বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় উল্কা ক্লাব আয়োজিত এই পুজো জেলা তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে থেকে ভক্তরা প্রায় তিন দিন ধরে ভিড় জমান এখানে। অন্যান্য পুজো দুদিনে বিসর্জন হলেও প্রথাগতভাবে শোভানগরের কালীপুজো অন্তত সাতদিন চলে। পূজা কমিটির তরফে জানাগেছে, মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ছোট্ট পরিসরে ১৯৭৯ সালে এই পুজোর সূচনা করেন স্থানীয় বাসিন্দা শশাঙ্ক ঝা। আর্থিক অনটনের কারণে কয়েক বছর পুজো করতে তিনি পারেননি। তারপর উল্কা ক্লাব কর্তৃপক্ষ পুজোর দায়িত্ব নেয়। উল্কার উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে সাড়ম্বরে এখানকার বিখ্যাত কালীপুজো হয়ে আসছে। এবারের পুজোর বাজেট করোনা আবহের কারণে অনেকটাই কাটছাঁট করা হয়েছে । স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় এই পুজো হয়ে আসছে। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মেলবন্ধন এখানকার পূজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
পুজোর কদিন ভিড় সামলান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। স্থায়ী বেদির উপরে মায়ের মূর্তি নির্মিত হয় এখানে। এবার ৫১ ফুটের কালী প্রতিমা তৈরি করেছেন।উদ্যোক্তারা জানান, পুজো উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে চলে মেলা। তবে এবছর প্রশাসনিক নির্দেশিকা মত মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহামান্য আদালতের নিয়ম মেনেই সবকিছুই করা হবে। বিসর্জনের আগেরদিন মঙ্গলঘট নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় মাদিয়া ঘাটে কালিন্দী নদীতে। বিশাল সুসজ্জিত শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই এলাকার সমস্ত কালী প্রতিমার সঙ্গে এখানকার কালী প্রতিমার প্রতীকী বিসর্জন করা হয়। কিন্তু এই বিশাল সুউচ্চ কালীর মৃন্ময়ী মূর্তির নিরঞ্জন বেদিতেই হয়ে থাকে। পাম্প মেশিনের সাহায্যে জল দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। পাশাপাশি করোনা আবহের মধ্যে উল্কা ক্লাবের পক্ষ থেকে মানিকচক বিধানসভার অন্তর্গত বহু এলাকায় দুস্থ মানুষের খাবার বিতরণ, স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরন কার্যক্রমও সদস্যরা সাধ্যমত চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সভাধিপতি গৌর চন্দ্র মন্ডল বলেন, শোভানগরের কালীপুজোর সুখ্যাতি রাজ্যজুড়ে রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম সকলের মেলবন্ধন ঘটে এই পুজোয়। কয়েকদিন ধরেই সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে শোভানগর। করোনা আবহে এবছর সরকারি নির্দেশিকাকে মান্যতা দিয়ে আয়োজন করা হয়েছে পুজোর।