অপরাজিতা জোয়ারদার , ৩ সেপ্টেম্বর : অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। এই নামের সাথে পরিচিত নন, এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া বড় কঠিন। আজ তাঁর জন্মদিন। বাঙালী প্রেম বলতে যার কথা না উল্লেখ করে পারেন না। তাঁর ছবির গানের মধ্য দিয়েই প্রেমিক যুগলের ” পথ যদি না শেষ” হওয়ার ইচ্ছা জাগে আজও। মহানায়ক উত্তম কুমার। ১৯২৬ সালে আজকের দিনেই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। পিতা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মা চপলা দেবীর তিন সন্তানের মধ্যে উত্তম কুমার ছিলেন সবার বড়। কলকাতার সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরে গোয়েঙ্কা কলেজে ভর্তি হন।
কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি তিনি। এরপরই অভিনয় জীবনেত শুরু। মায়াডোর নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তিলাভ করেনি তাই উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল দৃষ্টিদান। পরিচালক ছিলেন নিতীন বসু। বসু পরিবার চলচ্চিত্রে প্রথম নজরে আসেন তিনি। এরপর মুক্তি পায় সাড়ে চুয়াত্তর। এই ছবিতেই প্রথম দেখতে পাওয়া যায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় জুটি উত্তম সুচিত্রার। যারা আজও প্রাসঙ্গিক। উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলি ব্যবসায়িকভাবে সফল ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এগুলির মধ্যে প্রধান হল – হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা।

এছাড়াও বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্র গুলি হল ছোটিসি মুলাকাত, অমানুষ এবং আনন্দ আশ্রম । তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি নায়ক এবং দ্বিতীয়টি চিড়িয়াখানা। উত্তম কুমার নিজেকে সু-অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করেন এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছবিতে।এই ছবিতে প্রথম উত্তম কুমার তার পরিচিত ইমেজ থেকে কিছুটা সরে আসেন। আজও উত্তম কুমারের ভুবন ভোলানো হাসি, প্রেমিকসুলভ আচার-আচরণ বা অভিনয়ের নানা খুঁটিনাটি মন ছুঁয়ে যায় সকলের। ১৯৬৭ সালে এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ও চিড়িয়াখানা ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। কমেডি চরিত্রেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। দেয়া নেয়া, লুকোচুরি, মৌচাক সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে সেই প্রতিভার বিরল স্বাক্ষরও রেখে গেছেন তিনি।
সঙ্গীতের প্রতি তার ভালবাসা ও অভিনয়ের পারফেকশন আনতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এবং শ্যামল মিত্রের গানে তার লিপ দেওয়ার সময় রেকর্ডিং চলাকালীন শিল্পীর পাশে বসে তাদের সাথে গেনের অনুভূতি উপলব্ধি করতেন।এমন মহান নায়ক, প্রকৃতই মহানায়ক…ছিলেন..আছেন… থাকবেন… যতদিন বাংলা চলচ্চিত্র জগত থাকবে ততদিন।