প্রাচীন সাঁওতালি পুতুল নাচের শিল্প চরম সংকটে, বাঁচিয়ে রাখার আর্জি শেষ শিল্পীর

নিউজ ডেস্ক, নিতাই সাহা :  পাশ্চাত্য সংষ্কৃতির দাপটে বিলুপ্ত হওয়ার পথে আদিবাসী সমাজের প্রাচীন পুতুল নাচ। এই পুতুল নাচের ইতিহাস একটু আলাদা৷ আসুন জেনে নিই এই পুতুল নাচের ইতিহাস সম্পর্কে।

আমরা সাধারণত দু’ধরনের পুতুল নাচের সঙ্গে পরিচিত। এক হল স্ট্রিং পাপেট৷ যেক্ষেত্রে দড়িতে আটকানো থাকে পুতুল। আর দুই হচ্ছে রড পাপেট। এক্ষেত্রে কাঠির মাথায় আটকানো থাকে পুতুল। কিন্তু এর বাইরেও আরও এক ধরনের পুতুল নাচের শিল্প আছে। তারই নাম চদর বদর বা চদর বাঁদনি। এটি সাঁওতালি পুতুল নাচ। এর বেলায় পুতুল থাকে বাক্সের মধ্যে। লিভার ঠেলে পুতুলদের চালনা করা হয়৷ বীরভূম এবং ঝাড়গ্রামে এক সময় এই শিল্পের চর্চা দেখা যেত৷ কিন্তু এখন একেবারে তলানীতে এসে ঠেকেছে।

চদর বদরের শেষ শিল্পী যাকে বলা হয়, তিনি হলেন দমন মুর্মু। থাকেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের মহানন্দপুর গ্রামে। অনেকদিন আগেই দমনের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ ছোটো মেয়েই তাঁকে দেখাশোনা করে। অশক্ত শরীরে এখন হাঁটতে বেশ সমস্যা হয় তার৷ তবুও চদর বদর পুতুল নাচের প্রসঙ্গ তুললে ভাঙ্গাচোরা স্মৃতি গুলোকে ঘর থেকে করে বের করে এনে অতীতের দিন গুলিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন দমন। কিছুদিন আগে তিনি বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্পে পাকা ঘর পেয়েছেন। ঘর অর্ধেক নির্মিত হয়েছে। বাড়িতে যে দু’টি মাটির ঘর রয়েছে তার মধ্যে একটি এবারের বর্ষাতেই ভেঙ্গে গিয়েছে। আর সেই দুর্যোগেই ভেঙ্গে গেছে তার প্রাণের চদর বদর নাচ দেখানোর কাঠের বাক্সটাও। বাক্সে ধুলো বালি পড়ে থাকলেও কাঠের পুতুলগুলো মোটামুটি ঠিকঠাকই রয়েছে। বাড়ির মাটির দাওয়ায় পাটের তৈরী ধোকড়ায় বসে ভাঙ্গা পুতুল গুলো নেড়ে ঘেটে দমন মুর্মু এখনও বিড় বিড় করে সেই চদর বদরের পালাগান আউরে চলেন মাঝে মাঝেই৷ বয়সের ভাঁড়ে বেহালার সুতোগুলোতে আগের মতো সুরের মুর্চ্ছনা ছড়িয়ে দিতে পারেন না। তবে সুরে কোথাও ভুল হয় না তার। যে বেহালার সুরের মুর্ছনা একসময় গাঁয়ের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ত আজ তা দমনের বাড়ির সীমানার মধ্যেই ঘোরাফেরা করতে হাঁপিয়ে যায়। তাও হাল ছাড়তে নারাজ দমন। সরকারী শিল্পীর স্বীকৃতি পাওয়া দমন মুর্মু আক্ষেপের সুরে বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে এক পুতুল নাচ সম্পর্কে তেমন কোনো উৎসাহ নেই। ফলে এই পুতুল নাচ শেখার জন্য আজও কেউ এগিয়ে আসেনি। কিভাবে এই প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা ভাবিত দমন মুর্মু। একসময় উত্তরবঙ্গ এমনকি প্রতিবেশি রাজ্য বিহারেও দমনের চদর বদর পুতুল নাচ শিল্পের বেশ নাম ডাক ছিল৷ কিন্তু এখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাচীন শিল্প। আদৌ এই শিল্প ভবিষ্যতে টিকে থাকতে পারবে নাকি দমনের সাধের পুতুল নাচ কালের নিয়মে হারিয়ে যাবে এই বাংলা থেকে সেটাই এখন বড়প্রশ্ন।

Next Post

গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য উত্তর দিনাজপুরে

Sun Aug 23 , 2020
নিজস্ব সংবাদদাতা, গোয়ালপোখর : এক ব্যক্তির গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রবিবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর থানার গতি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেদবাডী গ্রামে। এদিন সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে পড়ে রক্তাক্ত ওই গলাকাটা মৃতদেহ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে গোয়ালপোখর থানার পুলিশ৷ জানা গেছে নিহত ওই ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন। বয়স […]

আপনার পছন্দের সংবাদ