নিউজ ডেস্ক : ঋতুপর্ণ ঘোষ। জন্মদিনে স্মরণ করতেই অজস্র বিখ্যাত সিনেমার নাম ভেসে আসে। বাংলা সিনেমা জগতে এই বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কীভাবে তাঁর বিশেষ দিনটি উদযাপন করতেন! সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ, সুমন্ত মুখার্জি, অর্ঘ্যকমল মিত্র অভিক, দেবব্রত দত্ত সহ আরও কয়েকজন মিলে জন্মদিন নিজের বাড়িতেই পালন করতেন। সাথে পছন্দের লর্ডস মোড়ের কাবাব, বিরিয়ানি। কেউ জন্মদিন না মনে করতে পারলেও নিজেই ফোন করে ডেকে নিতেন ঘরোয়া আড্ডায়। দেবজ্যোতি মিশ্রর গিটারে বিটলস আর সলিল চৌধুরীর গান শুনতে ভালোবাসতেন। অতিথিরা প্রত্যেকে কিছু না কিছু নিয়ে আসত। ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর অতিথিরা কী খেতে পছন্দ করেন সেই অনুযায়ী খাওয়ার দিতে পছন্দ করতেন। কোন প্লেট অতিথিদের পরিবেশন করার জন্য ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার নির্দেশ দিতেন।
১৯৬৩ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম। বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলে পড়তেন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি হীরের আংটি। দ্বিতীয় ছবি উনিশে এপ্রিল মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান। দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি বারোটি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পান।

২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় তাঁর। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছিলেন। দহন, (১৯৯৭), অসুখ (১৯৯৯), বাড়িওয়ালি, (২০০০), উৎসব(২০০০), চোখের বালি(২০০৩) তাঁর বিখ্যাত সৃষ্টির কিছু নাম। এছাড়াও হিন্দি ছবি রেনকোট, ২০০৭ সালে দ্য লাস্ট লিয়ার মুক্তি পায়। এটি একটি প্রাক্তন শেক্সপিয়ারিয়ান থিয়েটার অভিনেতার জীবনের গল্প। অমিতাভ বচ্চন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন এই ছবিতে।২০০৮ সালে মুক্তি পায় খেলা। এই বছরই মুক্তি পায় সব চরিত্র কাল্পনিক। এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়।২০০৯ সালে যীশু সেনগুপ্ত, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, দীপংকর দে ও মমতা শঙ্কর অভিনীত ছবি আবহমান মুক্তি পায়। এটিও শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় পুরস্কারে পুরষ্কৃত হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তার পরবর্তী ছবি সত্যান্বেষী-র শ্যুটিং শেষ করেছিলেন। নিজেও অভিনয় করেছিলেন বেশ কিছু ছবিতে। ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রথম অভিনয় করেন ওড়িয়া ছবি কথা দেইথিল্লি মা কু-তে। (২০০৩)। ২০১১ সালে তিনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেকটি প্রেমের গল্প এবং সঞ্জয় নাগের মেমরিজ ইন মার্চ ছবিতে অভিনয় করেন। এছাড়াও ঋতুপর্ণের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি চিত্রাঙ্গদাতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে।