নিউজ ডেস্ক , ৩০ অক্টোবর : উৎসব প্রেমী বাঙালির মহোৎসব দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই চলে আসে ধনদেবী লক্ষীর পুজো। দেবীর আরাধনা ঘিরে পুজোর জোগাড় করতে বাঙালির ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। পূর্ণিমা তিথিতে ঘরে ঘরে পুজিতা হয় দেবী লক্ষী। এই লক্ষী পুজো কোজাগরী লক্ষী পুজো নামেও পরিচিত।
কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি “কো জাগতি” অর্থাৎ “কে জেগে আছো” কথাটি থেকে। বলা হয়, “যার কিছু (সম্পত্তি) নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে”, আর “যার আছে (সম্পত্তি) সে যাতে তা না হারায় তার জন্য জাগে”। কথিত আছে, কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে আশীর্বাদ দেন। কিন্তু যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তাঁর বাড়িতে লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না ও সেখান থেকে ফিরে চলে যান।
প্রবাদ আছে, যে জেগে অক্ষ ক্রীড়া করে, লক্ষ্মী তাকে ধন সম্পদ দান করেন। সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পূজার বিশেষ নিয়ম।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার প্রকৃষ্ট সময় প্রদোষকাল। অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে দু ঘণ্টা পর্যন্ত যে সময়। যদিও প্রদোষ থেকে নিশীথ অবধি তিথি থাকলেও সেই প্রদোষেই পূজা বিহিত। কিন্তু আগেরদিন রাত্রি থেকে পরদিন প্রদোষ পর্যন্ত তিথি থাকলে পরদিন প্রদোষেই পূজা করা বিধেয়। আবার আগেরদিন রাতে তিথি থাকলেও যদি পরদিন প্রদোষে তিথি না থাকে তাহলে আগেরদিন প্রদোষেই পূজা করা কর্তব্য। কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাতে দেখা যায় জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক আচার অনুষ্ঠান। এখনও ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করে তার আরাধনা করা হয়। উপচারে ফল মিষ্টি ছাড়াও থাকে মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি। লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। কোনও কোনও পরিবারে পূজায় মোট ১৪টি পাত্রে উপচার রাখা হয়। কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকী দিয়ে সাজানো হয় পূজা স্থানটিকে। পূজার উপকরণ এবং আচার অনুষ্ঠান দেখে অনুমান করা যায় এর নেপথ্যে থাকা কৃষি সমাজের প্রভাব। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে মেলা বসে। কোথাও বা নৌকাবাইচও অনুষ্ঠিত হয়। ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক। চাল , অন্ন , খাদ্যশস্য হল লক্ষ্মীর প্রতীক। তাই যারা খাদ্য অপচয় করেন , তাদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না। ধানক্ষেতের আশেপাশে ইঁদুর বা মূষিকের বাস এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে। পেঁচক বা পেঁচার আহার হল এই ইঁদুর। গোলাঘরকে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয়। গোলাঘরের আশেপাশে ইঁদুরের বসবাস। পেঁচা এই ইঁদুরকে খেয়ে খাদ্যশস্য রক্ষা করে।