নিজস্ব সংবাদদাতা , রায়গঞ্জঃ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের নৃশংশ আক্রমন গতবছর কেড়ে নিয়েছিল বাবাকে- আকষ্মিক এই অভিঘাতে মাথার উপর যেন ছাদ ভেঙে পড়েছিল রায়গঞ্জের কৈলাসচন্দ্র রাধারাণী বিদ্যাপীঠের ছাত্রী কবিতা পালের।
জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। একদিকে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আর অন্যদিকে পরিবারে তীব্র আর্থিক অনটন-এই দুয়ের দ্বন্দ্বে এখন উত্তরনের পথ খুঁজতে মরিয়া রায়গঞ্জের দক্ষিন গোয়ালপাড়ার এই লড়াকু ছাত্রীটি। জীবন যন্ত্রনাকে আঁকড়ে ধরেও কবিতার সামাজিক বার্তা, “সবাই সতর্ক হোন, মাস্ক পড়ুন, সরকারি বিধিনিষেধ মানুন।”গত বছর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়েছিল বহু মানুষের প্রান। দিশেহারা হয়ে পরেছিল একাধিক জীবন। এমনই নির্মম অভিজ্ঞতার সাক্ষী রায়গঞ্জের দক্ষিন গোয়ালপাড়ার স্কুল ছাত্রী কবিতা পালের। গত বছর কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কবিতার বাবা পেশায় টোটোচালক প্রভাত পালের। কাঠিন্যে গ্রাস করা হিমশীতল শরীর টা ছুঁয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল কবিতা। একলহমায় অন্ধকার নেমে এসেছিল দুচোখে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারে নেমে আসে চরম আর্থিক অনটন।
মা দিপালী পাল রান্নার কাজ করে যৎসামান্য যা আয় করেন তা দিয়ে দুবেলা খাবার জোগাড় করাটাই অসম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু হার মানে নি কবিতা। জীবনের স্বপ্নকে সত্যি করতে দাঁতে দাঁত চেপে এক অন্য লড়াই শুরু হয় তার। মা ও ছোটবোনের পাশে দাঁড়াতে প্রাইভেট টিউশন শুরু করে লড়াকু ছাত্রীটি। একদিকে নিজের পড়াশোনা আর অন্যদিকে সংসারের হাল ধরতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলা ছোট্ট মেয়েটি আজ অনেকটাই পরিনত। পড়াশোনা করে জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে প্রয়োজন খানিকটা সহযোগিতা। তাই আত্মীয়র মোবাইলের মাধ্যমে স্যোশাল মিডিয়ায় টিউশানির জন্য আবেদন জানিয়েছে একাদশ শ্রেণির এইপড়ুয়া৷ এতে করে নিজের ও ছোটবোনের পড়াশোনা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি সংসারের অভাব মিটবে কিছুটা। তার মত, অসময়ে কোভিডে পিতৃবিয়োগের যন্ত্রনা আর সংসারের চরম দৈন্যতা যেন আর কারোর জীবনে না আসে। নিজের জীবনের ঘটনা মনে রেখেই সকলকে কোভিড বিধি মেনে চলার আবেদন জানিয়েছে সে। অনুরোধ জানিয়েছে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার। স্বামী বিয়োগের বেদনা বুকে নিয়েই, মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বায়না যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলেছে দিপালী দেবীকে। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই, স্বামীর মৃত্যুর পর এখনও মেলেনি কোনো সরকারি ভাতা বা সাহায্য। ছোট দুই ছাত্রীর আর্থিক অনটনে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির কথা সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কাছে শুনে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা তৃণমুল ছাত্র পরিষদের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অনুপ কর ওই পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।