
নিউজ ডেস্ক , ১০ই অক্টোবর : যার ছোঁয়ার লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর পুণ্য অর্জন হয়, সেই রাসচক্র কার হাতে তৈরি হয় জানেন! বংশপরম্পরায় সেই রাস চক্র নির্মাণ করে আসছে এক মুসলিম পরিবার৷ রাস যাত্রার আগেই মদন মোহন মন্দিরে পৌঁছে দিতে হবে সেই রাসচক্র৷ তাই স্বপরিবারে কাজ করে চলেছেন আলতাফ মিয়ার পরিবার৷ ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নাতনী সকলেই।
বাঙালির বাড়ি বাড়িতে যখন লক্ষ্মী পূজার আয়োজন তখন নিজের বাড়িতে উপোস করে রাস চক্র বানানোর কাজ শুরু করল আলতাফ মিয়া। আগামী ১৫ দিন এভাবেই চলবে তার দৈনিক রুটিন। শুধু তাই নয় সপরিবারে একই নিয়ম পালন করবেন তারা। কোচবিহারের রাজ ঐতিহ্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এর থেকে বড় উদাহরণ অন্য কোথাও আছে বলে মনে করে না কোচবিহারবাসী। গত তিন পুরুষ থেকে রাস উৎসবের জন্য রাস চক্র নির্মান করছেন আলতাফ মিয়া। তাঁর ঠাকুরদা পান মহম্মদ মিঞা এই রাশ চক্র তৈরির কাজ প্রথম শুরু করেন ৷ পান মহম্মদকে ডেকে কোচবিহারের মহারাজা রাস চক্র নির্মানের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ৪৪ বছর ধরে এই চক্র নির্মাণের কাজ করে চলেছেন আলতাফ মিঞা৷ শুধু চক্র নির্মাণই নয়, রীতিমত নিষ্ঠা ভরে লক্ষী পুজোর দিন থেকে উপোস করে নির্মাণের কাজ শুরু হয়৷ এই কদিন বাড়ির সবাই নিয়ম করে নিরামিষ ভোজন করেন। রাজ নির্দেশ, রাজ ঐতিহ্য সবটাই থাকে এই রাসচক্রে। লম্বায় ১৮ ফুটের কিছু বেশি, ধবধবে সাদা কাগজে নকশা কাটা। এই নকশাও হাতেই কাটা হয়। তারপরে আঠা দিয়ে বাঁশ এর কাঠামোর ওপরে লাগানো হয়। মাঝে থাকে বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি। অতীতে এই ছবি গুলিও হাতেই আঁকা হতো, কিন্তু কালক্রমে তা কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন আলতাফ। আলতাফের আশা তাঁর ভবিষ্যত প্রজন্মও রাসচক্র বানাবে নিষ্ঠা ভরে৷ তাঁর ছেলে আমিনুর এখন তাঁর সঙ্গেই কাজ করেন৷ এছাড়াও তাঁর নাতি ৭ বছরের রাজু হোসেনও ঠাকুরদা ও বাবার সঙ্গে চক্র নির্মাণের কাজে হাত লাগিয়েছে৷ কাজে হাত লাগান বউমাও।কোচবিহারের এই রাসমেলা এক করে দেয় হিন্দু-মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়কে৷ রাস চক্রে সম্প্রীতির ছাপ স্পষ্ট। এটিতে যে নকশা করা হয়, তা অনেকটাই তাজিয়ার মত দেখতে বলে মনে করেন সবাই৷ রাস উৎসবের মূল আকর্ষন রাসচক্র৷ সেই চক্র এখন তৈরি হচ্ছে কোচবিহারের হরিনচওড়া এলাকায় তোর্ষা নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় একচিলতে ঘরে৷ আজ সেই আলতাফ মিয়ার বাড়িতে দেখা করতে গেলেন কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পাশাপাশি তাঁর হাতে চাল,ডাল, তেল তুলে দেন। আলতাব মিঞা তাঁর বাড়িতে যাওয়া আসার রাস্তা নির্মানের আবেদন করেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কাছে। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, খুব শীঘ্রই এই রাস্তা তৈরি হয়ে করে দেওয়া হবে পৌরসভার পক্ষ থেকে। এর পাশাপাশি অসুস্থ আলতাফ মিঞার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবেন।
