নিজস্ব সংবাদদাতা , মানিকচক , ০৮ ডিসেম্বর : ৩৫০ বছর ধরে মথুরাপুরের রক্ষাকালী পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এ বছর পুজোয় পুরোপুরিভাবে মেলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে প্রশাসনের। মালদার মানিকচক ব্লকের মথুরাপুরবাসীরা রক্ষাকালী পুজো ঘিরে আনন্দে উৎসবে মেতে ওঠেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৫০ বছর ধরে মানিকচকের মথুরাপুর অঞ্চলে এই রক্ষাকালী পুজো নিয়ম-নীতি মেনেই হয়ে আসছে।
পূজা পরিচালন সূত্রে জানাযায়, প্রায় ৩৫০ বছর আগে গোটা মানিকচক জুড়ে কলেরা রোগের মহামারী দেখা দিয়েছিলো। বহু মানুষ একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছিলেন। রোগ প্রতিরোধের পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না মানিকচকবাসী। সেসময় মথুরাপুর অঞ্চলের কাহার পাড়ার এক অজ্ঞাত সাধুবাবা বটতলায় ধ্যান করতেন। তখন ওই সাধু এলাকাবাসীকে কলেরা মহামারী থেকে বাঁচতে মা রক্ষার আরোধনার পরামর্শ দেন। তারপর থেকে মথুরাপুরবাসী যৌথ হয়ে মা রক্ষাকালীর পুজো আরম্ভ করে। এলাকাবাসীর বিশ্বাস এই পুজো শুরুর পর থেকে আর এলাকায় কলেরার দেখা পাওয়া যায়নি। সেই থেকে শুরু পুজো যা এখনো একই মতো হয়ে আসছে। পুজো পরিচালন কমিটি আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর শীতের শুরুতে মায়ের পুজোর আয়োজন করা হয়। বর্তমানে মায়ের স্থাপিত বিশাল মন্দির রয়েছে। তবে এ বছর পুজো পরিচালনায় প্রশাসনের সমস্ত রকম নির্দেশিকা জারি রয়েছে। পুজো হলেও মেলাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন।
রক্ষাকালী পুজো ঘিরে বিশেষ নিয়ম রীতি রয়েছে। মায়ের প্রতিমার উচ্চতা ৩ ফুট। পুজোর দিন সকালে সূর্যোদয়ের পর মায়ের প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের আগে বানানো শেষ করা হয়। কাঁচা অবস্থাতেই মায়ের পুজো হয়। পুজো শুরুর সময় থেকে মায়ের প্রতিমা বানিয়ে আসছে স্থানীয় বসাক পরিবারের সদস্যরা। বংশ পরম্পরায় বসাক পরিবারের সদস্য জিতেন বসাক বর্তমানে প্রতিমা বানাচ্ছে। তিনি কর্মসূত্রে কলকাতায় পরিবারসহ বসবাস করেন। কিন্তু, মায়ের প্রতিমা বানানোর জন্য সমস্ত কাজ ফেলে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবছর তার আসা সম্ভব হয়নি। তার পুত্র পিন্টু বসাক এসেছেন সেই প্রতিমা তৈরি করতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মায়ের পুজো আরম্ভ হবে, যা সারারাত ব্যাপী চলবে এবং ভোরের কাক ডাকার আগেই মায়ের প্রতিমা পাশের ফুলাহার নদীতে নিরঞ্জন করা হয়। পুজোর সারারাত বলি প্রথা চলে। প্রায় প্রতিবছর ১৫০০ বেশি পাঠা বলি হয়। তবে পাঠাবলির বিশেষ নিয়ম রয়েছে, প্রতি মিনিটে ৫ টি বলি হয়। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন এখনকার পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এক রাতের এই পুজোয় সারা মানিকচকবাসী মত্ত থাকেন। মায়ের মন্দিরের পাশে আমবাগানে বিশাল জাকজমক মেলা বসে। কিন্তু এবছর করোনা আবহের কারণে মেলাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। সেই নির্দেশিকা মত মেলা বসছে না এবছর মন্ডপ প্রাঙ্গণে। মায়ের দর্শনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এক রাতে জমায়েত হয় মন্দির চত্বরে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে ভিড় সামাল দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুজো কমিটি। ভিড় যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রচুর পরিমাণে ভলেন্টিয়ার কাজ চালিয়ে যাবে মন্ডপ চত্বরে বলে জানিয়েছেন পুজো পরিচালন কমিটির সদস্যরা।
পূজা কমিটির এক সদস্য দোলন দাস জানান, ‘এত বড় পুজোকে শান্তিপূর্ণ সম্পন্ন করতে আমাদের পুলিশ কড়া নজরদারি থাকছে। পুলিশ ক্যাম্প থাকছে, মায়ের দর্শন ও পুজোর ব্যবস্থা থাকছে মহিলাদের জন্য। মায়ের প্রচুর অলংকার রয়েছে, যা ভক্তদের দানের। মালদা তথা প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ঝাড়খন্ড, এমনকি দিল্লি, মুম্বাই সহ প্রতিবেশী দেশ নেপাল, বাংলাদেশ থেকে আজকের এই দিনের মায়ের দর্শনে ভীড় জমান। তবে এবছর সমস্তকিছুই ফিকে রয়েছে কোরোনার কারণে। তবে মন ভালো নেই দোকানদারদেরও। কোন রকম ভাবেই মেলা বসবে না এবছর জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। তাই সমস্ত নির্দেশিকা মেনেই পুজোর আয়োজন করা হয়েছে উদ্যোক্তাদের তরফে।