আরসিটিভি সংবাদ : একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিসত্তার জন্য একটি স্মরণীয় দিবস যার পেছনে রয়েছে রক্তাক্ত ইতিহাস। একটি ভালোবাসা, যা প্রানসত্তার সক্রিয়তায় সংরক্ষিত, একটি সোচ্চার বিপ্লব, যার বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ।
” মাতৃভাষা বাংলা একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিসত্তার জন্য একটি স্মরণীয় দিবস যার পেছনে রয়েছে রক্তাক্ত ইতিহাস। একটি ভালোবাসা, যা প্রানসত্তার সক্রিয়তায় সংরক্ষিত, একটি সোচ্চার বিপ্লব, যার বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ভাষা, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভৌগলিক পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস সহ সকল ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যাবধান থাকা সত্বেও কেবল ধর্মের ভিত্তিতে এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব বাংলা তথা আজকের বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে এই অসম রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন – জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে তীর বিদ্ধ এক
সেই রাষ্টের শাসকগোষ্ঠী প্রথমেই বাঙালিকে শোষন করার কৌশল হিসেবে বেছে নেয় বাঙালীর প্রানের ভাষা বাংলাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ” তমদ্দুন মজলিশ ” গঠন করা হয়েছিল। ওই বছরেই ডিসেম্বরে অধ্যাপক নুরুল হকের নেতৃত্বে ” রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ” গঠন করা হয়।তবে ভাষা আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্যায়ে রূপ নেয় ১৯৫০ এবং ১৯৫২ সালে। ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পূর্ববাংলার জনগন ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।
আন্দোলনের তীব্রতা দেখে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ১৯৫২ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা শহরে সকল প্রকারের সভা সমিতি একমাসের জন্য বন্ধ ঘোষনা করেন এবং ১৪৪ ধারা জারি করেন। ভাষা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের সভাপতিত্বে এবং আবিদুস সামাদের মধ্যস্থতায় ১০ জন করে একটি দল বেড়িয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মিছিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে আন্দোলনকারীদের। নারকীয় ভাবে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে রফিক, আবদুস সালাম, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার সহ অনেককে।
আরও পড়ুন – কর্মবিরতিতে অনড় সরকারি কর্মচারীরা!
বাংলার মানুষের রক্তের বন্যায় ভেসে যাওয়া কালি দিয়ে লেখা হয় এক অনন্য ইতিহাস। নতি স্বীকার করে পাকিস্তান সরকার। সাময়িকভাবে বাংলাকে অন্যতম জাতীয় ভাষা করার প্রস্তাব প্রাদেশিক পরিষদে উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটি সর্বসন্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার পর সাংবিধানিকভাবে ১৯৫৬ সালে সংবিধানের ২১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।” মাতৃভাষা বাংলা চাই “, ” মায়ের ভাষায় বলতে চাই, ” রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ” এইসকল স্লোগানে ১৯৫২ সালের আজকের দিন ঢাকার আকাশ- বাতাস মুখরিত হয়েছিল। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম ও শফিউর রহমান সহ আরও অনেকে।
সেই ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলার অমর বর্ণমালা, মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষা। অবশেষে পূর্নতা পায় ” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ মহান এই দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আর সি টি ভি সংবাদের পক্ষ থেকে সকল ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।