নিউজ ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের এক মফস্বল অঞ্চলের মহিলা, যিনি দীর্ঘদিন মাথার যন্ত্রনায় ভুগছিলেন।দেশের নামী-দামী চিকিৎসকের পরাবর্শ অনুসারে ওষুধ খেয়েও যন্ত্রনার নিরসন হয় নি।হতাশ ওই মহিলার চিকিৎসার জন্য তার স্বামী একদিন কলকাতায় এক চিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে আসলেন।সাক্ষাৎ ধন্বন্তরী হিসাবে দেশ জোড়া নাম ওই চিকিৎসকের।
জেলখানার আবাসন থেকে উদ্ধার মহিলার দেহ, নিখোঁজ মৃতার ছেলে
সেই চিকিৎসক আবার প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু সময়ের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে রোগী দেখতেন তার নিজের বাসভবনে।ঘরের প্রান্তে থাকত তার বসার চেয়ার।ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকে হেঁটে রোগীকে ডাক্তারবাবুর সামনে গিয়ে বসতে হতো।রোগীর ঘরে ঢোকা এবং ডাক্তারবাবুর আসনের পাশে রোগীর বসা,এই সময়কালের মধ্যে ডাক্তারবাবুর রোগীকে পর্যবেক্ষন করে রোগ নির্নয় করতেন।রোগীকে মুখ ফুটে তার রোগের কথা বলতে হতো না।সেই মহিলাও তার স্বামীর সঙ্গে যথাসময়ে ধীর পায়ে হেঁটে ডাক্তারবাবুর সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলেন।ডাক্তারবাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মহিলাকে লক্ষ্য করলেন।মহিলা আসন নিতেই ডাক্তারবাবু মৃদু হেসে তাঁকে বললেন,চব্বিশ ঘন্টা মাথার যন্ত্রনায় কষ্ট পাচ্ছেন?আলোর দিকে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে?ডাক্তারবাবুর এই কথাতে ভদ্রমহিলার মুখে ফুটে উঠল এক এক আশ্চর্য আরামের হাসি।
নদীতে স্নান করতে নেমে নিখোঁজ তিনছাত্র
মহিলাও বিহ্বলভাবে কিছু কষ্টের কথা কাতরভাবে জানালেন ডাক্তারবাবুকে।ডাক্তারবাবু বললেন,আপনার কোনও ওষুধের দরকার হবে না।যে সিঁদুরটা আপনি ব্যবহার করছেন এখন থেকে সেই সিঁদুরটা আর ব্যবহার করবেন না।বাজার থেকে ভাল কোনও সিঁদুর কিনে তা ব্যবহার করুন।কিছুদিন দেখুন,তারপর আমাকে জানাবেন।এরপর ডাক্তারবাবু পরামর্শ মতো ওই মহিলা সেই সিঁদুরের ব্যবহার বন্ধ করে পরিবর্তে অন্য সিঁদুর ব্যবহার করতে লাগলেন এবং আরোগ্য লাভ করলেন।
টি ২০ বিশ্বকাপ জয় ভারতের, উন্মাদনায় ভাসল শহর
আজ কেন এই গল্পের উপস্থাপনা?কারন আজকের দিনটিতে সেই ডাক্তারটিকে সম্মান জানাতেই ভারতবর্ষে প্রচলন হয়েছিল ডক্টরস ডে-র।তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধাননচন্দ্র রায়।আর ডঃ বিধাননচন্দ্র রায়ের জন্মদিনটি ভারতে ডক্টরস ডে হিসাবে প্রচলিত।সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে পালন করে ডক্টরস ডে-র।বিশ্বে প্রথম চিকিৎসক দিবস পালিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।১৯৩৩ সালের ৩০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টরস ডে পালন করা হয়।অস্ট্রেলিয়াতেও চিকিৎসক দিবস পালিত হয় ৩০ মার্চ।কানাডার প্রথম মহিলা চিকিৎসক ডঃ এমিলি স্টো -কে সম্মান জানাতে কানাডায় দিনটি পালন করা হয় ১ মে।সেন্ট লুক-এর জন্মদিনটিকে সম্মান জানাতে ব্রাজিলের চিকিৎসকরা দিনটি পালন করেন ১৮ অক্টোবর।১৯৯১ সালের ১ জুলাই থেকে ভারতে জাতীয় চিকিৎসক দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি।১৮৮২ সালের ১ জুলাই বিহারের পাটনার বাঁকিপুরে জন্মগ্রহন করেন বিধানচন্দ্র রায়।মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬২ সালের ১ জুলাই।ভারতের স্বনামধন্য চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে ১ জুলাই।বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় ছিলেন ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত।ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেন প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী দেবীর কনিষ্ঠ সন্তানের নামকরন করেন ‘বিধান’।১৯০১ সালে পাটনা কলেজ থেকে গণিতে সাম্মানিকসহ বিএ পাস করে কলকাতায় চলে আসেন বিধানচন্দ্র রায়।১৯০৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএস এবং ১৯০৮ সালে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন।১৯০৯ সালে ইংল্যান্ড বার্থোলোমিউ হাসপাতালে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেন।একসঙ্গে এমআরসিপি (লন্ডন) এবং এফআরসিএস (ইংল্যান্ড) পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ন হন।১৯১১ সালে কলকাতায় ফিরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং পরবর্তীতে আরজি কর ও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন।এছাড়াও যুক্ত ছিলেন চিত্তরঞ্জন সেবা সদন,চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল,ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন এবং কমলা নেহেরু হাসপাতালের সঙ্গে।১৯২৩ সালে দেশবন্ধুর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষা লাভ করেন।
বিদেশের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা মালদার আমের
ডঃ বিধানচন্দ্র রায় কলকাতা কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক এবং কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।১৯৩১ সালে মহাত্না গান্ধির ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন।১৯৪৭ সালে কংগ্রেস প্রার্থী রূপে আইনসভার সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন ডঃ বিধানচন্দ্র রায়।১৯৪৮ সালের ১৪ জানুয়ারী থেকে ১৯৬২ সালের ১ জুলাই তার মৃত্যুদিন পর্যন্ত ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে দূর্গাপুর, বিধাননগর,কল্যানী, অশোকনগর- কল্যাণগড় চারটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করেন।তাঁর ১৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে নবগঠিত পশ্চিমবঙ্গের প্রভুত উন্নতি সাধন হওয়ায় ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে পশ্চিমবঙ্গের রূপকার নামে অভিহিত করা হয়।১৯৬১ সালের ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতসম্মান উপাধীতে ভূষিত হন ডঃ বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানে কলকাতার উপনগরী সল্টলেকের নামকরন করা হয় বিধাননগর।
দেশজুড়ে চালু নতুন টেলিকম আইন,কি রয়েছে নতুন আইনে
ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিনটিতে চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ও দায়িত্বগুলিকে স্বীকৃতি দিতে ভারতে ১ জুলাই পালন করা হয় ডক্টরস ডে।২০২৪ এর ১ জুলাই আরও একটি ডক্টরস ডে পালন হচ্ছে দেশের সর্বত্র।এবছর এই দিনটির মুল থিম “হিলিং হ্যান্ডস, কেয়ারিং হার্টস”। ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রে আবর্তিত হয়ে এগিয়ে চলুন চিকিৎসক সমাজ।সমাজের লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে চলা চিকিৎসকদের ডক্টরস ডে -তে স্যালুট জানায় আরসিটিভি সংবাদ।
রায়গঞ্জের সমস্ত খবর দেখুন শুধুমাত্র “আমার শহর রায়গঞ্জ”-এঃ