নিউজ ডেস্ক, ৩০ নভেম্বর : “যখন করেন হরি বস্ত্রহরণ। গোপীদের কাছে তিনি করিলেন পন। আগামী পূর্ণিমা কালে তাঁহাদের সনে। করবেন রাসলীলা পূণ্য বৃন্দাবনে ”
রাস যাত্রা সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক উৎসব। রাস মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথাবস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায়, দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় এবং কামপ্রবৃত্তিসমূহকে প্রেমাত্মক প্রকৃতিতে রূপ প্রদান করে অঙ্কন করা হয়েছে। এই উৎসবে গোপিনী সহযোগে রাধাকৃষ্ণের আরাধনাই রাসের মূল বিষয়। পুরাণে রাস উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন মতেরও উল্লেখ আছে। কোথাও শারদ রাস আবার কোথাও বসন্ত রাসের উল্লেখ পাওয়া যায়।
শ্রী কৃষ্ণের সংস্পর্শ পেয়ে গোপিনীদের মন অহং পূর্ণ হলে শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হন। গোপিনীরা ভুল বুঝতে পেরে শ্রীকৃষ্ণের স্তব স্তুতি করলে শ্রীকৃষ্ণ প্রত্যাবর্তন করে গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে অন্তরাত্মা শুদ্ধ করেন। গোপিনীদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং জাগতিক ক্লেশ থেকে মুক্তি দান করেন। এই রূপেই রাস উৎসবের প্রচলন ঘটে। বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের রাস উৎসব পালনের কথা শোনা যায়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এবং গিরিশচন্দ্রের সময়ের পরবর্তীকালে বাংলায় রাস উৎসবের বহুল প্রচলন ঘটে। বৃন্দাবন, মথুরা, ওড়িশা, অসম, মনিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আড়ম্বরের সঙ্গে রাস উৎসব পালন করা হয়। রাধাকৃষ্ণের আরাধনা মূল বিষয় হলেও অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে রাস উৎসব পালিত হয়। হর্ষচরিতের টীকাকার শঙ্করের মতে, রাস হলো এক ধরনের বৃত্তাকার নাচ যা আট, ষোলো বা বত্রিশ জনে সম্মিলিতভাবে উপস্থাপনা করা যায়।
এবছর পূর্ণিমা আরম্ভ হয়েছে ইংরেজির ২৯ নভেম্বর রবিবার, ১২ টা বেজে ৩২ মিনিটে। পূর্ণিমা শেষ হবে ইংরেজির ৩০ নভেম্বর ২০২০ সোমবার, দুপুর ২ টা বেজে ২৫ মিনিটে।
প্রচলিত আছে যে, চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন নবদ্বীপে। একথা যদি সত্যি হয় তাহলে স্বীকার করে নিতে হয় যে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই রাসের সূচনা হয়েছিল। তবে চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর নবদ্বীপের বৈষ্ণব আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। গৌরাঙ্গ-পরিজনেরা বাধ্য হয়ে নবদ্বীপ ত্যাগ করে স্থানান্তরে গমন করেন। ফলে বৈষ্ণবীয় উৎসব অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নবদ্বীপে যে রাস উৎসবের সূচনা হয় তা অভিনব এবং বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে তা অদ্বিতীয়।