নিউজ ডেস্ক, ১৫ নভেম্বর : প্রয়াত হলেন টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি আজ । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। গত ৬ ই অক্টোবর COVID-19 পজিটিভ হয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।
যদিও সপ্তাহ যেতেই করোনামুক্ত হয়েছিলেন তিনি কিন্তু স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে ভর্তি থাকতে হয়েছিলো তাকে। ২৫ শে অক্টোবর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ অরিন্দম কর জানান, সব চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। ভেন্টিলেশনে রাখা, ডায়ালয়সিস, স্টেরয়েড, ইমিউনোগ্লোবুলিন, কার্ডিওলজি, অ্যান্টি-ভাইরাল থেরাপি, ইমিউনোলজি সবকিছুই চেষ্টা করা হয়। তা সত্বেও সাড়া দেন নি তিনি। ক্রমেই আগের চেয়ে আরও খারাপ পরিস্থিতি হচ্ছিলো তাঁর। নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলজি, ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন এবং আইডি বিশেষজ্ঞরা দিনরাত প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন গত ৪০ দিন ধরে। শুক্রবার থেকেই তাঁর মস্তিষ্ক খুব কম কার্যকলাপ থাকে। অক্সিজেনেশনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গিয়েছিল এবং কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার প্রথম প্লাজমফেরেসিস এবং বুধবার ট্রেকোস্টোমি করা হয়েছিলো। যদিও কোনো চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যায় নি। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় সিনেমা জগতে।
অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে ছিলো চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি।তাঁর পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। ১৯৩৫ সালের ১৯ শে জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ে। বাবার চাকরি বদলের কারণে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্যালয়ও বদল হতে থাকে এবং উনি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জিলা স্কুল থেকে। তারপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেন।
১৯৫৯ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সর্বপ্রথম কাজ করেন প্রখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়-এর অপুর সংসার ছবিতে। ছবিটি পরিচালকের ৫ম চলচিত্র পরিচালনা। এর আগে রেডিয়োর ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোটো চরিত্রে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তার অভিনীত কিছু কিছু চরিত্র দেখে এমন মানানসই মনে হত যেন সৌমিত্রকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্টগুলো লেখা হয়েছিলো। সত্যজিৎ রায়-এর দ্বিতীয় শেষ চলচিত্র শাখা প্রশাখা-তেও তিনি অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনকন্যা, ঝিন্দের বন্দি, সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা থেকে,সোনার কেল্লা, হিরক রাজার দেশে সহ আধুনিক নানা ছবিতে তাঁর অভিনয় বাংলা চলচিত্রে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০০৪ – পদ্ম ভূষণ, ২০১২ – দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার,২০১৭ – লিজিওন অফ অনার, ২০১৭ – বঙ্গবিভূষণ সহ বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি।
জীবনের শেষ সময় পর্যন্তও অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। থেমে থাকেনি তাঁর পথ চলা। যদিও এদিন এই দীর্ঘ পথ চলার অবসান হল। কিন্তু তিনি স্মরনীয় হয়ে থাকবে আপামর বাঙালির মনে। বেঁচে থাকবেন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে।