২০১৬ সালের ঘটনা

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের SSC নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। ফলে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা চাকরি হারা হয়ে পড়েন। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সেখানে রাজ্য ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদও চাকরি বাতিলের মামলা দায়ের করে। শীর্ষ আদালতে যান চাকরি হারাদের একাংশ। ২০২৪ – সালে ৭ মে মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, এখনই কারো চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, আপাতত কাউকেই বেতন ফেরত দিতে হবে না। কিন্তু, এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে। যদি পরে তাঁদের নিয়োগ ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণিত হয় তবে অযোগ্যদের টাকা ফেরত করতে হবে।
২৭ জানুয়ারীর শুনানি পর্ব

২৭ জানুয়ারী অর্থাৎ সোমবার দুপুর ২ টা নাগাদ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুরু হয় এই মামলার শুনানি। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলে মামলার শুনানি। মূল মামলাকারীদের বক্তব্য অর্থাৎ যারা চাকরি হারা হয়েছেন তাদের কথা শোনেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। মূল মামলাকারীদের হয়ে আদালতে সওয়াল-জবাব করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিমেরা। সোমবার ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলে বলে, নতুন করে কি আবার পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে? অবশ্য নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, তা-ও জানতে চান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না । নতুন করে পরীক্ষা হলে অনেক জটিলতা তৈরি হবে। ওএমআর শিটে নম্বর নিয়ম মেনেই প্রকাশ করা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও করেন প্রধান বিচারপতি। জবাবে মুল মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, নিয়ম মেনে কাজ হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্ট- এর কথায় সহমত হয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, অনেকে আবেদন না করে চাকরি পেয়েছেন। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য তথা মূল মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে। তাঁর কথায় মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল ফলপ্রকাশ । সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। গোটা প্রক্রিয়া বিতর্কিত। তাই গোটা প্যানেল বাতিল করা উচিত। বিকাশ বাবু বলেন, রাজ্যের উচিত ছিল দুর্নীতি ছাড়া কাজ করা। রাজ্য, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রত্যেকের কথায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কারও কোনও কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। আরেক আইনজীবী ফিরদৌস শামিম প্রাথমিক ভাবে তাঁর ধারণা থেকে জানান, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি কাউন্সেলিং সঠিক পদ্ধতিতে হয়েছে। এরপরের কাউন্সেলিংগুলি হয়েছে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে। একই ভাবে নবম-দশম শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন হয়েছে। তারপরের কাউন্সেলিংগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে করা হয়েছে বলে আদালতে জানান ফিরদৌস।
বৈধ এবং অবৈধদের বাছাই করা কি সম্ভব?

চাকরি বাতিলের মামলাটি শুনেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় অর্থাৎ ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। তারপর সঞ্জীব খান্না সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার পর মামলাটি তাঁর এজলাসে ওঠে। শুনানির একটি পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানতে চান যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈধ এবং অবৈধদের বাছাই করা সম্ভব কি না?। তাতে মূল মামলাকারীদের এক আইনজীবী জানান, তা সম্ভব নয়। এই মামলায় প্রত্যেকেই দুর্নীতির অংশ। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ৭-১০ লক্ষ টাকা করে নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এক একটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে।মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ ফেব্রুয়ারী।