সরকারি হাসপাতালের প্রতি অনাস্থা

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ( partha chatterjee ) । বিগত আড়াই বছর ধরে কারাবাসে বন্দি তিনি। এর আগেও শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কৌশল করেছেন। বর্তমানে তাঁর শরীর স্থূল। ফলে সেই সংক্রান্ত কিছু সমস্যা বরাবরই রয়েছে তাঁর শরীরে । তবে জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই পায়ের সমস্যাতেও ভুগছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জেলে তাঁর ‘রুটিন চেকআপ’ও করা হয় প্রতি মাসে। জেল সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগেই ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রীর। জেলের মধ্যেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর সোমবার হঠাৎ জেলে অসুস্থ বোধ করলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং এসএসকেএমে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেন। চলতি মাসের গত সোমবার থেকে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জানা গেছে, আগের তুলনায় তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, এখনও সেখানেই রাখা হয়েছে তাঁকে। কারণ, শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে তাঁর। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যা ছিলই আগে থেকে। বাড়তি বিড়ম্বনা হিসেবে ক্রিয়েটিনিন, পটাশিয়াম, সোডিয়ামের মাত্রাতে গোলমাল দেখা দেয়। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর এই পরিস্থিতির জন্য অবশ্য তাঁরই খাদ্যাভ্যাসকেই দায়ী করেছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ। চিকিৎসকদের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত জেল কর্তৃপক্ষও। তাঁদের মতে, এই বয়সেও খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে পার্থর সংযমের অভাব রয়েছে, যা নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতার একটা বড় কারণ।
বেসরকারি চিকিৎসার নির্দেশ বিচারকের

তবে সোমবারই আদালতে পিটিশন জমা করেছিলেন তিনি। আবেদন করে পার্থ বলেছিলেন যে, এসএসকেএমে চিকিৎসা করিয়ে কিছুতেই সুস্থ হতে পারছেন না তিনি। তাই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুমতি যেন দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরেই এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট তলব করে পার্থর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল আদালত। মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পার্থর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। সংক্রমণের সমস্যাও রয়েছে। পার্থর সেই আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছে। তবে বিচার ভবনের বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন যে, নিজের খরচেই চিকিৎসা করাতে হবে তাঁকে। ইতিমধ্যে আইসিইউ থেকে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল। এরই মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করতে চান পার্থ। একথা জানার পর এসএসকেএম কর্তৃপক্ষও পার্থকে আর ধরে রাখতে চান না।
কবে হবে জেলমুক্তি?

কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রর পথের পথিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। কালীঘাটের কাকুর মতো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইচ্ছেপূরণেও সম্মত জানিয়েছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। এসএসকেএম থেকে এখন বেসরকারি হাসপাতালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্থানান্তর সময়ের অপেক্ষা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরে যে আপত্তি নেই, তা আদালতকে জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। সব ঠিক থাকলে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হতে পারে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কোনওভাবেই সিবিআই হাজিরা এড়াতে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারবেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২০২২ সালের ২২ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। ইডির পাশাপাশি পরে সিবিআইয়ের হাতেও গ্রেফতার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। জেলের ভিতর একাধিক বার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গ্রেফতারির পর ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে গিয়েও তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায় ইডি। একাধিকবার তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদনও করেছেন আদালতে। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আগেই জামিন দিয়েছিল পার্থকে। গত ১৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শর্তসাপেক্ষে জামিন পাবেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী । চার্জ গঠন এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বয়ান সংগ্রহ করা হয়ে গেলে তার আগেও জামিন পেতে পারেন। শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশই সোমবার কার্যকর করে বিচারভবন। কিন্তু সিবিআইয়ের মামলায় এখনও পার্থর জামিন হয়নি। ফলে এখনই তাঁর জেলমুক্তির সম্ভাবনা নেই।